Skip to Content

সুস্থ থাকার প্রাকৃতিক উপায়: ডা. জাহাঙ্গীর কবিরের কার্যকরী জীবনবিধান

10 অক্টোবর, 2025 by
সুস্থ থাকার প্রাকৃতিক উপায়: ডা. জাহাঙ্গীর কবিরের কার্যকরী জীবনবিধান
Muraduzzaman
| No comments yet

আসসালামু আলাইকুম, আমি ডা. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর কবির। প্রকৃতির কাছে ফেরা আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে শরীরকে ডিটক্স বা বিষমুক্ত করার জন্য। প্রকৃতি নিজেই আমাদের সেরা নিরাময়কারী (Nature is the best healer)। তবে শুধু প্রাকৃতিক পরিবেশে এলেই হবে না, সুস্থ ও রোগমুক্ত জীবনযাপনের জন্য আমাদের জীবনযাত্রায় কিছু মৌলিক পরিবর্তন আনতে হবে। চলুন জেনে নেওয়া যাক সেই কার্যকরী উপায়গুলো, যা আপনাকে একটি সুস্থ ও সুন্দর জীবন উপহার দেবে।


১. প্রকৃতির সাথে সংযোগ ও সূর্যের আলো

ভোরের স্নিগ্ধ প্রকৃতি আর গাছের ফাঁক দিয়ে উঁকি দেওয়া সূর্যের আলো—এই দৃশ্য কেবল মানসিক প্রশান্তিই দেয় না, এর শারীরিক উপকারিতাও অপরিসীম।

  • ভিটামিন ডি-এর উৎস: সকালের রোদ আমাদের শরীরে ভিটামিন ডি তৈরিতে সাহায্য করে, যা এখন বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত। ভিটামিন ডি আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং পুরুষদের টেস্টোস্টেরন হরমোন উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। যাদের মধ্যে পুরুষালি হরমোনের ঘাটতি বা দুর্বলতা দেখা যায়, তাদের প্রায়ই ভিটামিন ডি-এর অভাব লক্ষ্য করা যায়।
  • মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি: সকালের সূর্যের আলোতে থাকা ব্লু-লাইট (Blue Light) চোখের জন্য উপকারী। এটি আমাদের শরীর থেকে মেলাটোনিন (ঘুমের হরমোন) দূর করে এবং সারাদিনের জন্য শরীরকে প্রস্তুত করে।
  • গভীর ঘুমের জন্য: বিকেলে ৩০-৪৫ মিনিট সূর্যের দিকে বা আকাশের দিকে তাকালে রাতের ঘুম গভীর ও নিরবচ্ছিন্ন হয়।


২. সার্কাডিয়ান রিদম (Circadian Rhythm) মেনে চলুন


আমাদের শরীরের একটি নিজস্ব জৈবিক ঘড়ি আছে, যাকে সার্কাডিয়ান রিদম বলে। একে ঠিক রাখা সুস্থতার চাবিকাঠি।

  • তাড়াতাড়ি ঘুমানো: রাত ৯টা থেকে ১০টার মধ্যে ঘুমিয়ে পড়ার অভ্যাস করুন। যারা ওজন কমাতে চান, ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে চান, তাদের জন্য ঘুমের কমপক্ষে ৩-৪ ঘণ্টা আগে রাতের খাবার শেষ করা উচিত।
  • পর্যাপ্ত ঘুম: প্রতিদিন মোট ৭-৮ ঘণ্টা গভীর ঘুম নিশ্চিত করুন। এটি ওজন কমানো থেকে শুরু করে সবকিছুর জন্যই অপরিহার্য।
  • ভোরে ওঠা: সকালে তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠলে আপনি প্রকৃতির স্নিগ্ধতা উপভোগ করার পাশাপাশি দিনের কাজ শুরু করার জন্য পর্যাপ্ত সময় ও শক্তি পাবেন।


৩. স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস: ইনসুলিন নিয়ন্ত্রণ

আমাদের খাদ্যাভ্যাসই আমাদের শরীরকে গড়ে তোলে। বিশেষ করে যাদের ওজন বেশি, ডায়াবেটিস বা শরীরে ইনফ্লামেশন আছে, তাদের জন্য খাবার বাছাই অত্যন্ত জরুরি।

  • যেসব খাবার বাদ দেবেন:
    • প্রসেসড ও আল্ট্রা-প্রসেসড ফুড: এগুলো সুস্থ বা অসুস্থ—কারোর জন্যই ভালো নয়।
    • ইনসুলিন বৃদ্ধিকারী খাবার: ভাত, রুটি, ফল, দুধ এবং চিনি ও চিনিজাতীয় খাবার সাময়িকভাবে এড়িয়ে চলুন। মনে রাখবেন, শরীরে ইনসুলিনের মাত্রা বেশি থাকলে চর্বি গলা কঠিন হয়ে যায়, বরং চর্বি জমতে শুরু করে। যাদের ওজন বাড়ছেই, তাদের ইনসুলিন রেজিস্টেন্স থাকার সম্ভাবনা বেশি।
  • যেসব খাবার খাবেন:
    • ভালো ফ্যাট: সয়াবিন তেলের বদলে খাঁটি ঘানিতে ভাঙা সরিষার তেল, এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল, নারিকেল তেল এবং ঘি খান।
    • স্বাস্থ্যকর নাস্তা: ডিমের কুসুমসহ ডিম, ঘি বা নারিকেল তেলে ভাজা সবজি এবং সালাদ দিয়ে একটি চমৎকার সকালের নাস্তা হতে পারে।
    • দুপুরের খাবার: দুপুরে মাছ, ডিম এবং প্রচুর পরিমাণে শাকসবজি খেতে পারেন।


৪. ব্যায়াম ও শারীরিক কার্যকলাপ

সুস্থ থাকতে হলে শরীরকে সচল রাখা আবশ্যক।

  • ঘাম ঝরানো ব্যায়াম: প্রতিদিন এমন ব্যায়াম করুন যাতে শরীর থেকে ঘাম ঝরে। সকালে বা বিকেলে, আপনার সুবিধা মতো সময়ে ব্যায়াম করতে পারেন।
  • শ্বাসের ব্যায়াম: আমি সম্প্রতি আরও দুটি ব্যায়াম যোগ করে মোট আটটি শ্বাসের ব্যায়াম দিয়েছি। ফুসফুসের কার্যকারিতা বাড়াতে এবং মানসিক চাপ কমাতে এই ব্যায়ামগুলো নিয়মিত করুন।
  • প্রকৃতির মাঝে হাঁটুন: খালি পায়ে ঘাসের উপর হাঁটা এবং রোদে যাওয়া—এই দুটি অভ্যাস আপনার জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে।


৫. মানসিক প্রশান্তি ও ডিজিটাল ডিটক্স

আধুনিক জীবনে মোবাইল, ইন্টারনেট এবং সোশ্যাল মিডিয়া আসক্তি মাদকের চেয়েও ভয়ংকর হয়ে উঠছে।

  • স্ক্রিন থেকে দূরে থাকুন: সন্ধ্যার পর মোবাইল বা যেকোনো ডিভাইসের নীল আলো থেকে নিজেকে দূরে রাখুন। এটি আপনার ঘুমের গুণগত মান নষ্ট করে।
  • বই পড়ুন: ডিজিটাল ডিভাইসের পরিবর্তে কাগজের বই পড়ার অভ্যাস করুন।
  • প্রকৃতিতে সময় কাটান: মাঝে মাঝে এমন জায়গায় যান যেখানে নেটওয়ার্ক নেই। গ্রিড থেকে বেরিয়ে প্রকৃতির সাথে সময় কাটালে মানসিক প্রশান্তি ফিরে আসবে।


সারসংক্ষেপ: সুস্থ জীবনের মূলমন্ত্র

আসুন, সংক্ষেপে জেনে নিই সুস্থ থাকার মূল চাবিকাঠিগুলো:

  • স্বাস্থ্যকর ও পরিমিত খাবার খান; ক্ষুধা লাগলেই খান।
  • মাঝে মাঝে রোজা রাখুন (Fasting)।
  • তাড়াতাড়ি ঘুমান এবং ভোরে উঠুন।
  • নিয়মিত রোদে যান এবং ঘাসের উপর হাঁটুন।
  • ঘাম ঝরিয়ে ব্যায়াম করুন এবং শ্বাসের ব্যায়ামের চর্চা করুন।
  • মানসিক প্রশান্তির জন্য নিজেকে সময় দিন এবং ডিজিটাল ডিভাইস থেকে দূরে থাকুন।
  • নিজেকে ভালোবাসুন এবং নিজের যত্ন নিন।

জীবনটাকে উপভোগ করুন, সুস্থ থাকুন। অন্যথায় অসুস্থ হয়ে ওষুধ, অপারেশন, আইসিইউ-সিসিইউ-এর বিছানায় দিন গুনতে হবে। মনে




Sign in to leave a comment