Skip to Content

পিসিওএস (PCOS) থেকে মুক্তি: আপনার আত্মবিশ্বাস এবং শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনুন

10 অক্টোবর, 2025 by
পিসিওএস (PCOS) থেকে মুক্তি: আপনার আত্মবিশ্বাস এবং শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনুন
Muraduzzaman
| No comments yet

আসসালামু আলাইকুম প্রিয় দর্শক। পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম বা পিসিওএস (PCOS) নিয়ে অনেকেই হতাশায় ভোগেন। এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে শুধু চিকিৎসকের ওষুধ বা পুষ্টিবিদের পরামর্শ যথেষ্ট নয়, বরং আপনার আত্মবিশ্বাস (Confidence) ফিরিয়ে আনা এবং জীবনের শৃঙ্খলা (Discipline) বজায় রাখা সবচেয়ে বেশি জরুরি।


পিসিওএস আসলে কী এবং এর মূল কারণ কী?

আল্ট্রাসোনোগ্রাফিতে ওভারিতে একাধিক সিস্টের উপস্থিতির কারণেই এই সমস্যার নাম হয়েছে পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম (Polycystic Ovarian Syndrome)


পিসিওএস-এর লক্ষণসমূহ:

  • মাসিক অনিয়মিত হওয়া বা বন্ধ হয়ে যাওয়া, ঘন ঘন হওয়া, বা অতিরিক্ত রক্তপাত।
  • পুরুষালী হরমোন টেস্টোস্টেরন (Testosterone) বেড়ে যাওয়ার কারণে মেয়েদের বুকে লোম, দাড়ি-গোঁফ গজানো (যা অত্যন্ত বিব্রতকর), ছেলেদের মতো ব্রণ হওয়া, মাথায় টাক পড়া।
  • মেজাজ রুক্ষ হওয়া, মুড সুইং (Mood Swing), গভীর হতাশা বা ডিপ্রেশন (Depression)
  • ঘাড় ও বগল কালো হয়ে যাওয়া বা আঁচিল হওয়া।
  • ওজন বৃদ্ধি (তবে কম ওজনের মেয়েদেরও হতে পারে)।


মূল কারণ: ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স

পিসিওএস-এর মূল কারণ হলো ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স (Insulin Resistance)। আমরা যখন বারবার খাই এবং সেই খাবার (বিশেষ করে চিনি ও শর্করা) ব্যবহার না করি, তখন কোষে অতিরিক্ত চর্বি জমতে থাকে। ফলে রক্তে থাকা চিনি কোষে ঢুকতে পারে না। এই চিনিকে কোষে ঢোকানোর জন্য অগ্ন্যাশয় (Pancreas) অতিরিক্ত ইনসুলিন (Insulin) তৈরি করতে থাকে, যার ফলে রক্তে ইনসুলিনের মাত্রা বেড়ে যায়— একে হাইপারইনসুলিনেমিয়া (Hyperinsulinemia) বলে।

এই অতিরিক্ত ইনসুলিন মেয়েদের শরীরে টেস্টোস্টেরন হরমোন (Testosterone) তৈরি করে, যার ফলে মেয়েদের মধ্যে পুরুষালী বৈশিষ্ট্যগুলো দেখা যায় এবং তাদের মাসিক চক্র ব্যাহত হয়।


প্রচলিত চিকিৎসা কেন সম্পূর্ণ সমাধান নয়?

পিসিওএস-এর জন্য ডাক্তাররা অনেক সময় ওজন কমানোর পরামর্শ দেন, অল্প অল্প করে বারবার খেতে বলেন, কিংবা পিল বা ডায়াবেটিসের ওষুধ মেটফর্মিন (Metformin) খেতে দেন।

  • অল্প অল্প করে বারবার খাওয়া: এই অভ্যাস ইনসুলিনকে সারাক্ষণ বাড়িয়ে রাখে, যা পিসিওএস-এর মূল কারণকে আরও বাড়িয়ে তোলে।
  • ওষুধ: পিল বা মেটফর্মিন সাময়িক উপশম দিতে পারে, কিন্তু রোগের মূল কারণ—ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স—দূর করতে পারে না। ফলে রোগী পুরোপুরি সুস্থ হতে পারেন না এবং আত্মবিশ্বাস হারাতে থাকেন।


পিসিওএস থেকে মুক্তির পথ: শৃঙ্খলা ও জীবনযাত্রার পরিবর্তন

পিসিওএস কোনো রোগ নয়, এটি মূলত আপনার জীবনযাত্রার শৃঙ্খলার অভাবের ফল। ডিসিপ্লিন বা শৃঙ্খলা ফিরে আনলেই আপনার মাসিক চক্র (Menstrual Cycle) সহ শরীরের সব ডিসিপ্লিন ঠিক হয়ে যাবে।


১. সঠিক খাদ্যভ্যাস: ইনসুলিন নিয়ন্ত্রণের মূল চাবিকাঠি

পিসিওএস থেকে মুক্তি পেতে আপনার খাদ্যভ্যাসকে এমনভাবে সাজাতে হবে, যা সরাসরি ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স কমাতে সাহায্য করে।


❌ যা সাময়িকভাবে পুরোপুরি বাদ দিতে হবে:

এই খাবারগুলো ইনসুলিনের মাত্রা দ্রুত বাড়িয়ে দেয়, যা পিসিওএস-এর মূল কারণ।

  • আল্ট্রা-প্রসেসড এবং ফাস্ট ফুড: ক্রিসপি-ক্রাঞ্চি খাবার, ডুবো তেলে ভাজা খাবার, পিৎজা, বার্গার, চিপস ইত্যাদি।
  • উচ্চ শর্করাযুক্ত খাবার: ভাত, রুটি, পাউরুটি, এবং প্রক্রিয়াজাত সিরিয়াল বা প্যাকেটজাত খাবার।
  • চিনি ও মিষ্টি: চিনি, মধু, যেকোনো মিষ্টি জাতীয় খাবার, সফট ড্রিংকস (কোল্ড ড্রিংকস) এবং ফলের জুস।
  • ফল ও দুগ্ধজাতীয় খাবার: সাময়িকভাবে ফল এবং দুধ (যা ইনসুলিন বাড়াতে পারে) এড়িয়ে চলতে হবে।
  • ভেজাল এবং চাষের খাবার: ফার্মের ডিম, চাষের মাছ, চাষের মুরগি এবং ভেজাল তেল (যেমন সয়াবিন তেল) পরিহার করতে হবে।


✅ যা নিয়মিত খেতে হবে (ইনসুলিন-বান্ধব খাবার):

সঠিক ফ্যাট এবং প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবারগুলো আপনার পেট ভরা রাখবে এবং ইনসুলিন নিয়ন্ত্রণে রাখবে।

খাদ্যের প্রকারঅন্তর্ভুক্ত খাবারসমূহকেন খাবেন?
প্রোটিন ও ফ্যাটডিম (দেশি মুরগির), মাছ (নদীর/সমুদ্রের), মাংস (দেশি/ঘাস খাওয়া পশুর), কলিজা, মগজ, পায়াএগুলো ফ্যাট বার্ন করতে, কোষ খালি করতে এবং টেস্টোস্টেরন কমাতে সাহায্য করবে।
ভালো ফ্যাটঘি, নারকেলের তেল, অলিভ অয়েল (সালাদে বা রান্নার শেষে), অল্প সরিষার তেল।ভালো ফ্যাট কোষে জমতে থাকা চর্বি গলাতে এবং খিদে কমাতে সাহায্য করে।
সবজি ও ফাইবারসবুজ শাকসবজি (বিভিন্ন রঙের), লাউ, চাল কুমড়া, বিট, বিটকা ভাস।এগুলো ভালো ব্যাকটেরিয়া তৈরি করতে, ফাইবার সরবরাহ করতে এবং শরীরে প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।


২. মানসিক ও শারীরিক শান্তি (Mind-Body Discipline)

পিসিওএস-এর সঙ্গে স্ট্রেস (Stress), অ্যাংজাইটি (Anxiety), হতাশা এবং রাত জাগার গভীর সম্পর্ক রয়েছে।

  • ঘুম: রাত জাগা বন্ধ করে আর্লি ঘুমাতে যান এবং কমপক্ষে ৮ ঘণ্টা ঘুমানো নিশ্চিত করুন। রাতের ১০টা থেকে ২টার ঘুম মস্তিষ্কের ডিটক্সিফিকেশন এবং মেমোরি কনসলিডেশনের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ।
  • রাগ নিয়ন্ত্রণ: রাগ নিয়ন্ত্রণের জন্য নিয়মিত শ্বাসের ব্যায়াম (Breathing Exercise) এবং মানসিক প্রশান্তির চর্চা করুন। অতিরিক্ত রাগ আপনার সব অর্জন মুহূর্তেই নষ্ট করে দিতে পারে।
  • আলো-অন্ধকার: দিনের বেলায় সূর্যের আলোতে থাকুন (বিশেষ করে ঘাসে হাঁটুন ও রোদ লাগান)। সন্ধ্যায় মোবাইল, ল্যাপটপ, টেলিভিশন থেকে দূরে থাকুন এবং রাতে অন্ধকারে ঘুমান।
  • অন্যান্য চর্চা: নিয়মিত নামাজ, কোরআন তেলাওয়াত, ভালো বই পড়া (মোবাইল নয়, বাস্তব বই) মানসিক প্রশান্তি বাড়াতে সাহায্য করে।


৩. শরীরকে ডিটক্সিফাই করুন

শরীর থেকে ক্ষতিকারক উপাদান বের করে দিতে (ডিটক্সিফিকেশন) ও পেটে ভালো ব্যাকটেরিয়া তৈরি করতে সহায়ক হবে:

  • কফি এনেমা (Coffee Enema)।
  • গ্রিন জুস ও চাল কুমড়ার জুস।
  • ভালো ফাইবারযুক্ত (Fiber) খাবার খাওয়া।


আপনার জীবন আপনার নিয়ন্ত্রণে

পিসিওএস-এর চিকিৎসা শুরু হয় আত্মবিশ্বাস দিয়ে। মনে রাখবেন, বারবার ব্যর্থ হলেও আপনার চেষ্টা করার লাইনটা সঠিক ছিল না। যখন আপনি রোগের মূল কারণ (ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স) বুঝে সঠিক শৃঙ্খলাবদ্ধ জীবনযাপন শুরু করবেন, তখন আপনার হতাশাও কাটবে, আত্মবিশ্বাসও ফিরবে।

আপনি যখন সঠিক খাবার চয়ন করবেন, সঠিক সময়ে ঘুমাবেন এবং মানসিক প্রশান্তির চর্চা করবেন, তখন আপনার শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য দুটোই উন্নতি করবে। খুব দ্রুতই দেখবেন আপনার মাসিক নিয়মিত হয়েছে এবং অনেক দম্পতি দীর্ঘদিনের অপেক্ষার পর সন্তানের মুখ দেখছেন।

হতাশ হওয়ার কোনো কারণ নেই, আপনার জীবন ও স্বাস্থ্যের নিয়ন্ত্রণ আপনার হাতেই!

ড. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর কবিরের পরামর্শ এবং বিনামূল্যে সেবা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাইলে তাঁর লাইভ সেশনগুলোতে অংশগ্রহণ করতে পারেন।



Sign in to leave a comment